Wednesday, 2 April 2014

প্রতিদিন তুমি পৃথিবীর আলো নিয়ে খেলা করো

প্রতিদিন তুমি পৃথিবীর আলো নিয়ে খেলা করো,
ফুরফুরে অতিথির মত ফুলে বিস্ময়ে, জলে, ধরা দাও।
পুঞ্জীভূত ফলের মত যে সফেদ মাথা, আমি দু'হাতের ভেতর 
এতটা নিবিড় আঁকড়ে ধরি, তার চেয়ে অনেক অঢেল তুমি।

ভালবাসি বলেই তুমি অনন্য, প্রেম ।
তোমাকে হলদে ফুলের মালায় দেখতে চাই। 
কে যেন তোমার নাম আকাশের নক্ষত্রে লিখে রাখে ধোঁয়াময় আখরে। 
তোমার অস্তিত্বের আগে কেমন ছিলে তুমি, সে কথা স্মরণ করতে চাই!

হঠাত্‍, বাতাস তুমুল আছাড় খায় আমার দেয়ালে,
আকাশ একটি ছায়াময় জাল হয়ে লুফে নেয় মাছ।
কোনো না কোনো সময় সব -- সব দমকা ঝড় আলগা হয়ে যায়।
বৃষ্টি মেয়েটিকে বিবসনা করে। 

পলাতকা পাখি উড়ে যায়।
বাতাস। বাতাস ।
আমি শুধু মানুষের ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই ছাড়া কিছুই পারিনা। 
আর ঝড়, ঘুরে ঘুরে কালো পাতা উড়িয়ে নিয়ে আসে, 
গতরাতে আকাশে নোঙর ফেলা ডিঙির বাঁধন ছিঁড়ে যায়।

তারপরও তুমি আছ। যাওনি কোথাও।
আমার শেষ কান্নার উত্তর দেবে বলেই যেন, তুমি থেকে যাও,
আমাকে আঁকড়ে ধরো, সে কি ভয়?
তারপরও, কীসের যেন ছায়া সরে যায় তোমার চোখের তারায়।

এখনো, ছোট পাখিটি আমার, তুমি মধুমালতীর স্তবক তুলে আনো, 
আমায় দেবে বলে, তোমার স্তনে সেই গন্ধ লেগে থাকে।
যখন এক বিষাদময় বাতাস হনন করে প্রজাপতি, 
তখনও, আমি তোমায় ভালবাসি, আমার আনন্দ 
তোমার মুখের টুকটুকে লাল ফলে দাঁত বসিয়ে দেয় 

আমাকে নিয়ে এত কষ্ট তোমার,
আমার এই নিঃসঙ্গ, আদিম সত্তাকে মেনে নিতে -- যাকে সবাই ছেড়ে যেতে চায়।
কতবার ভোরের শুকতারা আমাদের চোখে চুমু দেয়, 
কতবার আমাদের মাথার ওপর ধূসর আভা ঘুরে যায় পাখার মত।

আমার শব্দরাজি তোমার ওপর বৃষ্টি হয়ে পড়ে, তোমাকে আদর জানায়।
বহুদিন তোমার ঝলসানো শুক্তি-শরীর ভালবাসি আমি।
তোমার করতলে সমস্ত পৃথিবী, কল্পনা করি।
পাহাড় থেকে তোমার জন্য গুচ্ছ গুচ্ছ হেসে-ওঠা ফুল আনব এখন,
নীলাভ ব্লু বেল, বাদামী ঝাড়, গ্রামীণ ঝাঁকায় ভরা চুমু
একটি রক্তিম চেরী গাছকে বসন্ত যা-কিছু করে, তোমাকে আমি তাই করতে চাই।


-অনুবাদ: আনন্দময়ী মজুমদার 
২০১৪/০৪/০৩

(`Every day you play with the light of the universe', XIV from `Twenty Poems of Love and a Song of Despair', 1924, by Pablo Neruda)

No comments:

Post a Comment